প্রসূন করণ (যুগশঙ্খে প্রকাশিত,,,)
রাজ্যে আরো কয়েক লক্ষ মহিলা লক্ষ্মী ভাণ্ডার পাবেন। কয়েক লক্ষ মানুষ বার্ধক্য ভাতা পাবেন। রাজ্য সরকারের যে সব ভাতা প্রকল্প রয়েছে বা যে সকল পরিষেবামূলক প্রকল্প রয়েছে সেগুলি মানুষ পাবে। বিশেষ করে ২৬ সে বিধানসভা ভোটের আগে মানুষ এসব পাবে। একইসঙ্গে বিধানসভা ভোটের আগে রাস্তা ব্রীজ সহ নানা ধরণের পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ হবে বা শুরু হবে। কেননা, বিধানসভা ভোট এপ্রিল মে মাসে হতে চলেছে। ভোট জেতাটাই প্রথম শর্ত। ভোট জিততে গেলে মানুষকে খুশি করতে হবে। মানুষ খুশি না হলে ভোট জেতা সম্ভব নয়। তাই ভোট এলে মানুষ যেমন কিছু টাকা পেতে পারে তেমনি কিছু উন্নয়নমূল কাজ হয়। জনগন এই সত্যটা জানে। তাই মানুষ অপেক্ষা করে ভোট অবধি। তবে এটাও ঠিক ৭৫ বছর ধরে বিধানসভা ও লোকসভার ভোট হয়েছে অনেক। তবুও কিন্তু পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ শেষ হয়নি। বা মানুষের চাহিদা মিটেনি। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার কয়েক হাজার প্রকল্প চালু করে এসেছে। কিন্তু মানুষের আর্থিক চাহিদা মেটেনি।
এর প্রধান কারণ, মানুষের সামনে প্রয়োজনীয় উপার্জনের রাস্তা নেই। সব মানুষ তো প্রয়োজনমত উপার্জন করতে পারে না বা উপার্জন করার মত কোন রাস্তা থাকে না। বেশীরভাগ মানুষ যা রোজগার করে তাতে তার উদর ভরে না। অন্যান্য প্রয়োজন গুলো তাদের অধরা থেকে যায় বা ঋণ করতে হয়। যে কারণে এখন রাজ্যে ৮০ শতাংশ পরিবার ঋণগ্রস্ত। বিশেষ করে মহিলা স্বনির্ভর গোষ্টি পদ্ধতিতে প্রায় প্রতিটি পরিবার ঋণের জালে জড়িয়েছে। ঋণ করে আর্থিক ভাবে সয়ম্ভর হওয়া সহজ কাজ নয়। ঋণ নিয়ে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার হার পাঁচ শতাংশ হবে না। অথচ মানুষকে ঋণ করে বাঁচতে হচ্ছে। নতুবা সরকারী পাঁচশ বা হাজার টাকার ভাতা ভরসা করে টিকতে হচ্ছে। অথচ প্রতিটি পরিবার বা প্রতিটি মানুষের ব্যায় বাড়ছে। মোবাইল ফোন, বিদ্যুৎ, রান্নার গ্যাস, টিভি-র কেবল লাইন প্রভৃতির জন্য প্রতিটি পরিবারের ব্যয় বাড়ছে। কিন্তু ব্যয়ের নীরিখে আয় হচ্ছে না। প্রতিটি পরিবার তো চা, ঘুগনি দোকান করে রোজগার করতে পারবে না। সবাই যদি এই সব ব্যবসা করে কিনবে কে? অনুরূপ সমস্ত ছোট ব্যবসা লাটে উঠেছে। গরু মুরগী ছাগল পালন করে স্বনির্ভর হওয়া সম্ভব কিনা তা জানতে সরকার বা তাদের বিশেষজ্ঞদের এই সব ব্যবসায় নামা দরকার। কেননা, যারা পরিকল্পনা গ্রহণ করে তারা থাকে ঠান্ডা ঘরে। হাতে কলমে গতর খাটিয়ে রোজগার করতে মুন্সিয়ানা লাগে। চাষ বা বাগান প্রভৃতি করার মধ্য দিয়ে মানুষের চাহিদা মিটছে না। আধুনিক যুগে মানুষের মৌলিক চাহিদা অন্ন বস্ত্র বাসস্থানের বাহিরে আরো বহু ক্ষেত্রে টাকা দরকার। শিক্ষা স্বাস্থ্য সহ ভোগ্যপন্য কেনা ও ব্যবহারে টাকা লাগে। মানুষের সামনে ভোগবাদী সভ্যতার লালিপপ ঝুলিয়ে দিয়ে ভাতা প্রকল্প চালু করাটাকে কখনো দূরদর্শি শাসন ব্যাবস্থা বলা যায় না। কিংবা বেতনভোগী একটা শ্রেণী গড়ে তুলে ক্ষমতা ধরে রাখা গেলেও উন্নত শাসন ব্যবস্থা হতে পারে না। ভাষণে শ্লোগানে উন্নত মানব সমাজ গড়া সহজ। কিন্তু বাস্তবে উন্নত মানব সমাজ গড়া যায় না। আর অসহায় জনগন তাই ভাতা খয়রাতমুখী হয়ে থাকে এবং ভাতা খয়রাত দাতাদের সমর্থন দিতে বাধ্য হয়। কেবল রাজ্য সরকারগুলি নয়, ভারত সরকারও ৭৫ বছর ধরে ভাতা খয়রাত ও নানাবিধ প্রকল্প চালয়ে যাচ্ছে। প্রতিটি পরিবার বা প্রতিটি কর্মক্ষম মানুষ যাতে বুদ্ধি ও শ্রম প্রয়োগ করে অর্থ উপার্জন করতে পারে সেদিকে কোন পরিকল্পনা করতে ব্যর্থ হয়েছে। কেন্দ্র বা রাজ্য কোন সরকারই কখনো সকল মানুষকে বেতনভোগী কর্মচারী বানাতে পারবে না। এমনকি কোম্পানী বা বেসরকারী সংস্থাগুলোও কখনো সমস্ত কর্মক্ষম মানুষকে উপযুক্ত বেতনে কাজ দিতে পারবে না। অথচ মাত্র ২০ শতাংশ পরিবার সভ্যতার সকলসুফল লুটেপুটে নেবে। এই ২০ শতাংশ হলো রাজনীতির ব্যাবসায়ী, তাদের তাঁবেদার, বড় ব্যবসায়ী, কোম্পানী কর্পোরেট মানুষজন বা পরিবার। এই সঙ্গে রয়েছে বেতনভুক একটা শ্রেণী। বাকি ৮০ শতাংশ মানুষ বা পরিবার ভাতা খয়রাত ভাষণ শ্লোগান শুনতে শুনতে জন্মাবে ও মরবে। এরফলে গড় মানুষের বোধবুদ্ধি পঙ্গু হয়ে পড়ছে। শাসক ও শাসক দলের কথায় চলতে বাধ্য হচ্ছে মানুষ। শাসক বা শাসক দলের ভয়ে গড় মানুষ নিজেদের ভবিষ্যত প্রজন্মের নিরাপত্তা ভুলে যাচ্ছে। দুস্কৃতি, দূর্ণীতি এবং প্রায় কিনে রাখা প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনার জালে আটকে পড়েছে তথাকথিত গণতন্ত্র। ভয়ের আবর্তে শিক্ষিত সমাজ, যুব সমাজ নেশাগ্রস্ত।

