সনাতন হিন্দু সমাজ সংস্কৃতির অবক্ষয়ের কারণ বিশ্লেষণ

বিশ্লেষক,,,, হরিদাস পাল

হিন্দু সমাজে “বর্ণ” বা “জাত” প্রথা আজও মানুষের মনে গভীরভাবে গেঁথে আছে। অথচ এর শুরুটা হয়েছিল সমাজ সংগঠনের নিয়ম হিসেবে, শোষণের হাতিয়ার হিসেবে নয়। প্রাচীন যুগ (খ্রিষ্টপূর্ব ১৫০০ – ৬০০ খ্রি.পূ.)।  বৈদিক যুগে সমাজকে ভাগ করা হয় ৪ বর্ণে — ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র। উদ্দেশ্য ছিল কাজভিত্তিক দায়িত্ব বণ্টন, কিন্তু ধীরে ধীরে জন্মভিত্তিক বিভাজনে রূপ নেয়। গুপ্ত ও পাল যুগ (চতুর্থ – একাদশ শতাব্দী)
ব্রাহ্মণিক আধিপত্য বাড়ে, কিন্তু তখনও সমাজে “জাতি” বা “উপজাতি” খুব শক্তভাবে গাঁথা ছিল না। বাঙালির স্থানীয় জনগোষ্ঠীগুলো তুলনামূলকভাবে মিশ্র সমাজে বাস করত।
বল্লাল সেন ও কুলিন প্রথার বিস্তার (১২শ শতাব্দী)
সেন রাজবংশের রাজা বল্লাল সেন (প্রায় ১১৫৯ – ১১৭৯ খ্রি.)
“কুলিনিজম” বা “কুলিন প্রথা” চালু করেন —
কিছু ব্রাহ্মণ, কায়স্থ ও বৈদ্য পরিবারকে সমাজের ‘উচ্চতম কুল’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
এর ফলে শুরু হয় বংশভিত্তিক শ্রেণিবিন্যাস — যা পরবর্তীতে “জাত” প্রথাকে আরও দৃঢ় করে তোলে।
উৎস: উইকিপিডিয়া, “Kulinism” ; যদুনাথ সরকার – History of Bengal
মধ্যযুগ ও মুসলিম শাসনকাল (১৩ – ১৮ শতাব্দী)
জমিদার, পুরোহিত, কায়স্থ শ্রেণী ক্রমে নিজেদের সামাজিক অবস্থান পাকাপোক্ত করে।
নিম্নবর্গ ও অদলিত জনগোষ্ঠী ধর্মীয় ও সামাজিকভাবে আরও কোণঠাসা হতে থাকে। তলোয়ারের ভয়ে উচ্চ বর্ণের অনেকে ইসলাম হতে বাধ্য হয়েছে। নিম্নবর্গ প্রায়ই লোভে ও ভয়ে ধর্মান্তরিত হয়েছে। যার বিক্ষিপ্ত প্রভাব এখনো লক্ষ্যণীয়।
ব্রিটিশ আমল (১৮ – ২০ শতাব্দী)
ব্রিটিশ প্রশাসন “কাস্ট সার্ভে” ও “জন্মভিত্তিক রেকর্ড” রাখে, ফলে জাত-বিভাজন আরও প্রাতিষ্ঠানিক হয়। শিক্ষিত ও উচ্চবর্ণের হাতে চলে যায় ক্ষমতা, বঞ্চিত হয় নিম্নবর্ণ। উল্টে নিম্নবর্গ অনেকেই খৃষ্টান ধর্ম গ্রহণ করেছে। এখনো চলছে। মূলত অভাব তাদের ধর্মান্তরিত হতে উৎসাহিত করে। উত্তর পূর্ব ভারতের উদাহরণ লক্ষ্যণীয়।
বর্তমান সময় (২১ শতাব্দী)
আইনত জাত-বৈষম্য নিষিদ্ধ হলেও সমাজে তা এখনো বিভিন্নভাবে টিকে আছে।
বিয়ে, রাজনীতি, এমনকি চাকরির ক্ষেত্রেও জাত-পরিচয় অনেক সময় প্রভাব ফেলে। রাষ্ট্র আবার এস সি, এস টি, ওবিসি–ওয়ান টু ফর্মূলা চালু করে হিন্দুদের ঐক্যের বদলে বিভাজনকে  উৎসাহিত করছে। ভোট সর্বস্ব রাজনৈতিক গণতন্ত্রের স্বার্থে। গতি প্রকৃতি স্পষ্ট করছে হিন্দুদের ভবিষ্যত হয় ইসলামাইজ বা খৃষ্টানাইজ। তথাকথিত হিন্দু সমাজ নিজেরাই নিজেদের শেষ করতে যথেষ্ট। এই জনগোষ্ঠী মানসীক শারিরীক সহ অর্থনৈতিক সামাজিক সব দিক থেকেই দূর্বল ও এরা ভাগ্যের উপর নির্ভর করে থাকে। ফলে এদের সহজে ব্যাবহার করা যায়। লোভ ও ভয় দেখিয়ে এদের ধর্মান্তরিত করা সহজ। বাংলাদেশ এমন ঘটনা আকছার ঘটছে।
জাত-প্রথার মূল শিকড় বহু পুরনো, তবে বল্লাল সেনের সময় থেকেই এর “সামাজিক কাঠামো ও মর্যাদাভিত্তিক বিভাজন” বাংলায় শক্ত ভিত্তি পায়।
আজও সেই বিভাজনের ছায়া আমাদের সমাজে রয়ে গেছে —
যতদিন না মানুষ বুঝবে, “মানুষের মূল্য জন্মে নয়, কর্মে”, ততদিন মুক্তি অসম্ভব সনাতন হিন্দু জনগোষ্ঠীর। আসলে হিন্দু রিলিজিয়ন বা সনাতন সংস্কৃতি প্রশান্ত সাগরের মত গভীর। এই গভীরতা গড় মনুষ্য প্রজাতির মধ্যে নেই। ধর্ম ও সংস্কৃতি রক্ষার চেয়ে হিন্দু নিজ নিজ স্বার্থের মোহে বদ্ধ রয়েছে। প্রয়োজনে ধর্মান্তরিত হতে প্রস্তুত। এই শ্রেণীর উপস্থিতি এখন প্রকাশ্যে দৃশ্যমান।
( সংগৃহীত ও সংযোজিত)

More From Author

পদ্মপুকুরিয়ার ক্লাব অ্যালফাবেদ এর ২৫ বছরের শ্যামাবন্দনা।

দীপাবলী ও শ্যামাপূজা বহু প্রাচীন সনাতনী প্রথা। যা গভীর তাৎপর্য্যপূর্ণ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *