পরীক্ষামূলক শাসন ব্যবস্থা সফল ও সার্থক প্রয়াস।

পঃ বঙ্গে গণতন্ত্র ঠিক কি বস্তু বা ব্যবস্থা দেশের নব্বই শতাংশ মানুষ জানে না। জানার দরকার নেই। কেননা গড় মানুষের প্রথম চাহিদা বেঁচে থাকা ও কত সহজে বাঁচা যায় তার চেষ্টা। পঃ বঙ্গে এক নতুন আঙ্গিকের শাসন ব্যবস্থা পরীক্ষামূলক চলছে এবং সফল বলা যায়। যে নতুন আঙ্গিকে বামেরা ৩৪ বছর শাসন করেও ফেল করেছে সেই নীরিখে বর্তমান রাজ্যের শাসক দল বা সরকার আরো আধুনিক ও বৈজ্ঞানিকভাবে শাসন ব্যবস্থা চালাচ্ছে।নতুন এই থিওরীর মূল শর্ত হলো বেশী মানুষকে মাসোহারা দেওয়া এবং গ্রাউন্ড লেবেলে দলের পদাধিকারী বা জনপ্রতিনিধিদের অবাধ স্বাধীনতা প্রদান। একই কৌশল প্রশাসনের সমস্ত উইং-এ কার্যকর করা। সমাজের তথাকথিত সুশীল সমাজ বা বুদ্ধিজীবি শ্রেণীকে পদ পুরস্কার ও মাসোহার দিয়ে বশীভূত রাখা। যা অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল জনসংখ্যা যেহেতু বেশী তাদের কাছে মাসে মাসে হাজার কিংবা দু হাজার টাকা আকাশের চাঁদ, ভোট ব্যাঙ্ক শক্তপোক্ত। এতে প্রতি পরিবার মাসে পাঁচ দশ হাজার টাকা মৌফত পেয়ে যাচ্ছ। নিশ্চিত ভোট। সঙ্গে রাজ্যের সংখ্যালঘুদের এন আর সি-র ভয় প্রদর্শন, এস সি কোটায় সংখ্যালঘুদের অবাধ সুবিধা প্রদান, অধুনা নতুন টেকনিক-বাংলা ভাষীদের বিভিন্ন রাজ্য থেকে তাড়ানোর অভিযোগ তুলে রাজ্যের একটা অংশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করা, অবৈধ অনুপ্রবেশ কারীদের রক্ষা করার প্রয়াস। অন্যদিকে গণতন্ত্রের চোখ বা চতুর্থ পিলার মিডিয়াকে বিজ্ঞাপণ বা অন্যান্য সুযোগ পাইয়ে দিয়ে তাদের দূরদৃষ্টিকে ধ্বংস করে দেওয়া। সঙ্গে মিডিয়াম্যানদের মাঠ থেকে করে খাওয়ার ছাড়পত্র। শাসক দলের নেতা নেত্রীরা মিডিয়া পার্সনদের দৈনিক দিন মজুরীর ব্যবস্থা করায় তারাও খুশি এবং মিডিয়া হাউসও কর্মচারী পোষণের ভার মুক্ত। তারপরে এখন সোস্যাল মিডিয়ার দাপাদাপি। সেখানে কোন অতীত ভবিষ্যত ভাবনা নেই। বর্তমান ভাবনা প্রাপ্তির পরিমাণ নির্ভর। ভবিষ্যত ভাবনাও নেই। সবাই সেই বেঁচে থাকার চেষ্টা করে চলেছে। সঙ্গে মদ মাদক যৌনতার মুক্তাঞ্চল তৈরী করা, যা যুব সমাজের কাছে পেড়ে পাওয়া চৌদ্দ আনা। সামজবিরোধী বা মাসলম্যানদের এলাকা ভিত্তিক পোষণ ব্যাবস্থা। এ এক অতি উচ্চমানের ক্ষমতা কেন্দ্রীভূতিকরণের কৌশল, যা পৃথিবীতে নতুন এক শাসন ব্যবস্থার সূত্র হতেই পারে। শিক্ষা নাকি মনুষ্য চেতনা গড়ে। সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংগঠিত ঘটনাগুলো দলতন্ত্রের যে উৎপাদন তাতে কোন সন্দেহ নেই। যে চারটি স্তম্ভের উপর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত সেই চারটি স্তম্ভ সম্পূর্ণভাবে দলদাসদের দখলে নিশ্চিত করা গেছে। বাকি জনগনের যে ক্ষুদ্র অংশ প্রতিবাদী তাদের শায়েস্তা করার সব ধরণের মালমশলা মজুত। ভয়ের আবর্তে প্রতিবাদ বা প্রতিকার ফাঁসির মঞ্চে ঝুলছে। ঠিক এমন অবস্থায় সমাজ বা শাসন ব্যবস্থার উন্নতিসাধন কল্পবিলাস। দুর্নীতিমুক্ত, সমাজবিরোধী মুক্ত, মাদক ও উলঙ্গ যৌনতা মুক্ত একটা সমাজ গঠন কল্পনায় থাকতে পারে। নতুন পরীক্ষামূলক শাসন ব্যবস্থার পক্ষে নীরব সমর্থন জুগিয়ে যাচ্ছে তথাকথিত কং-কমু জোট, এবং প্রধান বিরোধী দলের একটা অংশ মনে মনে নতুন ধারার এই শাসন ব্যবস্থার পক্ষে যে রয়েছে তাও স্পষ্ট। খামোকা চাকরী প্রার্থীরা বা চাকরী হারারা আন্দোলন করছে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা থেকে সরকার যে দায় মুক্ত হতে চায় তার ইঙ্গিত স্পষ্ট। সরকারী কর্মী বহর কমানো মূল লক্ষ্য। যে টাকা সরকারী কর্মী বাহিনীর পেছনে ব্যয় হয় সেই টাকায় সাধারণ মানুষকে ভাতা দিলে ভোট ব্যাঙ্ক শক্ত থাকে। সরকারি ও বেসরকারী ক্ষেত্রে মাস মাহিনার কর্মচারী মেরেকেটে কুড়ি শতাংশ। আশি শতাংশ মানুষ বা পরিবারের মাসিক নিশ্চিত রোজগার নেই। অসংগঠিত ক্ষেত্রগুলিতে দৈনিক মজুরি বা রোজগার এতটা কম যে, পরিবার প্রতিপালন দূরে থাক নিজের জীবনধারণ সম্ভব নয়। এই সার তথ্যটা পঃ বঙ্গের শাসক উপলব্ধি করে দান খয়রাত ভাতা প্রভৃতি চালু করেছে। বৃহত্তর অংশের মানুষ এইটুকু আর্থিক সাহায্যে তুষ্ট এবং দাতার পক্ষে সমর্থন জোগায়। বিশেষ করে মহিলাদের হাতে মাসে হাজার টাকা তুলে দেওয়া ও মহিলাদের ঘর থেকে রাজনীতির আঙিনায় নিয়ে আসা, এস এইচ জি ফর্মূলাতে প্রতিটি পরিবার ঋণের জালে জড়ালেন মহিলারা গ্রুপকে অবলম্বন করে বাহিরের জগত দেখতে পেয়েছে। ফলে মহিলাদের বৃহত্তর অংশ দাতা ও পথপ্রদর্শকের পক্ষে রয়েছে। পঃ বঙ্গের সমাজের কোন কোন স্তরকে কোন ফুলে পূজো করতে হয় তার নবতম সূত্র আবিস্কার করতে সক্ষম হয়েছে শাসক। যা সাড়ে তিন দশকের বামেরা আবিস্কার করতে পারেনি। বামেরা জমি রাজনীতি ইউনিয়নবাজীকে হাতিয়ার করে ও প্রশাসনকে উপযুক্ত ব্যবহার করে ক্ষমতাকে দীর্ঘ স্থায়ী করতে পেরেছিল। সেই কৌশলের উন্নত ফর্মূলার আবিস্কার ও প্রয়োগ সফল হয়েছে বর্তমান শাসক। বিরোধী দলগুলির মধ্যে বাম–কংগ্রেস বর্তমান সাইনবোর্ড রক্ষার তাগিদে আছে। প্রধান বিরোধী দল বিজেপি সত্তর শতাংশ হিন্দু ভোট একত্রিত করতে পারবে না। রাজ্যে জনবিন্যাস এমন অবস্থানে গেছে মুসলিম ভোট সরকার গঠনে টার্ম কার্ড। পঃ বঙ্গের মুসলিম ভোটের এক শতাংশ বিজেপি পাবে কিনা সন্দেহ। যাইহোক যদি দান খয়রাত ও মুক্তমনে মুক্তহস্তে রোজগারের সুযোগ বন্ধ হয় এবং রেশনে বিনামূল্যে খাদ্যশস্য দেওয়া বন্ধ হয় তাহলে পঃ বঙ্গের দারিদ্রের বাস্তব চিত্র ফুটে উঠবে। নতুন এহেন শাসন নীতি নিয়েছে কেন্দ্র ও রাজ্য উভয়ে। একই পদক্ষেপ করছে আমেরিকা। সরকারী চাকরী থেকে বহালে ছাঁটাই করছে আমেরিকা। আগামী দিনে কোম্পানী বা কোম্পানী গুলো মিলে দেশ বা রাজ্য পরিচালনা করতে পারে। এভাবেই মানব সভ্যতায় শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটে চলেছে। তাই পঃ বঙ্গের শাসক দল বা সরকার যে কৌশলে শক্ত ভীত তৈরী করেছে তাতে বিজেপি-র কোন সাধ্য নেই রাজ্যের শাসক দলকে হটানো। কেননা, মেরুকরণের রাজনীতিতে সংখ্যালঘু হিন্দু ভোট একত্রিত হতে পারে না, অতীতে কোন দিন হয়নি, ভবিষ্যতে হবে না, প্রয়োজনে হিন্দুদের একটা সুবিধবাদী অংশ পরিস্থিতি মাফিক ধর্মান্তরিত হতেই পারে। এমনিতে গ্রাম শহরে বহু হিন্দু হচ্ছে খৃষ্টান, সেও ভাতা ও পুরস্কারের লোভে। হিন্দু মেয়েরা জেনে বা না জেনে বিয়ে করে মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করছে। বিজেপি বা সনাতনীর বলছে লাভ জেহাদ। এ যেন সময়ের নিত্য লীলা।

More From Author

দিঘার ঝাউবনে অজ্ঞাত পরিচয় ব্যাক্তির দেহ উদ্ধার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *